আদালত পাড়ায় পরিচিত একটি শব্দ হলো নারাজি। কিন্তু আমরা অনেকেই এই নারাজি সম্পর্কে অবগত নই। সাধারণ অর্থে নারাজি হলো রাজি বা খুশি না হওয়া। আদালতের ভাষায় নারাজি হলো কোন তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী কর্তৃক লিখিত অভিযোগ। কোন ব্যক্তি থানায় মামলা দায়ের করলে ঐ মামলাটি একজন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন এবং তদন্তে অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত না হলে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে থাকেন।তদন্ত প্রতিবেদন যাই হোক না কেন যিনি মামলাটি দায়ের করলেন তিনি যদি ঐ তদন্ত প্রতিবেদনে খুশি না হন বা তার আপত্তি থাকে তাহলে তিনি ঐ তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করতে পারেন। ঠিক একইভাবে যদি কোন ব্যক্তি আদালতে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সি. আর মামলা দায়ের করেন তাহলে আদালত ঐ মামলাটি আমলে গ্রহণ করতে পারেন অথবা তদন্তের জন্য থানায় পাঠাতে পারেন। এক্ষেত্রেও থানার একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনে বাদী বা অভিযোগকারী সন্তুষ্ট না হলে তিনি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করতে পারেন।
নারাজি পিটিশন দাখিলের পর কি হয়
নারাজি পিটিশন হলো ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ। নারাজি পিটিশন পাওয়ার পরে ম্যাজিষ্ট্রেট বাদীকে ফৌজদারী কাযবিধির ২০০ ধারা মোতাবেক পরীক্ষা করে সরাসরি ১৯০ (আই) (এ) ধারা মোতাবেক অভিযোগটি আমলে নিতে পারেন অথবা তিনি অধিকতর তদন্তের জন্য নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করতে পারেন অথবা বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে পারেন।সাধারণত আমাদের দেশে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ম্যাজিষ্ট্রেট নারাজি পিটিশন পাওয়ার পর অপরাধটির অধিকতর তদন্তের জন্য পাঠিয়ে থাকেন।এক্ষেত্রে বাদী বা অভিযোগকারী একের অধিকবার নারাজি পিটিশন দাখিল করতে পারেন।(সুত্রঃ ২০১৭ (২) এল এন যে ১৯)
আসামী কি নারাজি পিটিশন দাখিল করতে পারে কিনা
আসামী কোন তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন দাখিল করতে পারেনা। এমন কি যদিও তদন্তকারী কর্মকর্তা কোন মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে কোন আসামীর অব্যাহতির প্রার্থণা করে কিন্ত ম্যাজিষ্ট্রেট উক্ত আসামীকে অব্যাহতি প্রদান না করে আসামীর বিরুদ্ধে অপরাধটি আমলে নেন তখনও উক্ত আসামী ম্যাজিষ্ট্রেটের উক্ত আমলে নেওয়ার আদেশকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনা। এমনকি পুলিশ চার্জশীট দিলেও কোন আসামী উক্ত চার্জশীটের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন দাখিল করতে পারেনা।আসামী তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের সময় অব্যাহতির প্রার্থনা করতে পারে।(২৬ বিএলটি (এইচসিডি) ২০১৮ (৪০)
বাদীকে জড়িয়ে চার্জশীট দেওয়া হলে বাদী কি নারাজি দিতে পারে কিংবা চার্জশীট হতে নাম কর্তনের জন্য আবেদন করতে পারে কিনা
অনেক সময় দেখা যায় কোন মামলার তদন্তে বাদী নিজেই কথিত অপরাধের সহিত যু্ক্ত রয়েছে। সেক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।এক্ষেত্রে বাদী হয়ে যায় মামলার অভিযুক্ত আসামী। এমন পরিস্তিতিতে বাদীর নারাজি পিটিশন দাখিলের অধিকার খর্ব হয় না। তিনি যথারীতি বিজ্ঞ আদালতে উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন দাখিল করতে পারেন। তবে আসামী হিসেবে তিনি চার্জশীট হতে তার নাম কর্তনের জন্য কোন আবেদন দাখিল করতে পারেন না। তিনি অন্যান্য আসামীর মত চার্জ গঠনের সময় অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারেন। কারণ চার্জশীট হতে নাম কর্তনের ক্ষমতা বিচারিক আদালত ছাড়া কোন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেই। পারে।এচাড়া কোন আসামীই চার্জ শুনানীর আগে চার্জশীট হতে তার নাম কর্তনের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট আবেদন করতে অধিকারী নয়। (২৬ বিএলটি (এইচসিডি) ২০১৮ (৪০)।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন মন্তব্যের ঘরে