Search Suggest

জনসাধারণের অসুবিধা সৃষ্টিকারী উৎপাত অপসারণে আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন


অনেক সময় দেখা যায় জনগণের ব্যবহার্য কোন পথ, নদী বা খাল অবৈধ দখলদারগণ এমনভাবে দখল করে যাতে করে সেই পথ, নদী বা খাল ব্যবহার করতে সাধারণ মানুষদের অসুবিধা হয়; অথবা এমনও হয় যে কোন ব্যবসায়ী তার ব্যবসায় বা পেশা এমন ভাবে পরিচালনা করেন অথবা কোন মালপত্র বা পণ্য দ্রব্যের এমনভাবে সংরক্ষণ করেন যা করে পার্শ্ববতী বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য বা শারীরিক আরাম আয়াসের পক্ষে ক্ষতিকর; অথবা এমনও দেখা যায় যে কোন গৃহ, তাবু বা কাঠামো বা কোন বৃক্ষ এমন অবস্থায় আছে যে, তা পড়ে যেতে পারে এবং ফলে নিকটবতী স্থানে বসবাসকারী বা ব্যবসায় পরিচালনাকারী বা নিকটবতী স্থান দিয়ে পথ অতিক্রমকারী ব্যক্তিদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমন সব ক্ষেত্রে সচেতন একজন নাগরিক হিসেবে নিজের সুবিধা অসুবিধার পাশাপাশি আমরা সাধারণ মানুষের সুবিধা অসুবিধা নিয়েও উদ্বিগ্ন থাকি।চিন্তা ভাবনা করতে থাকি আইনগতভাবে এসব অসুবিধা কিভাবে দুর করা যায় যে সম্পর্কে। উপরে যে সমস্যাবলির কথা বললাম আইনের ভাষায় তাকে ‘পাবলিক নুইসেন্স বা জনসাধারণের উৎপাত’ বলা হয়। আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধির দশম অধ্যায়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিধানাবলী রয়েছে।তবে এই অধ্যায়ের কোন বিধানই মহানগরী এলাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।চলুন দেখা যাক জনসাধারণের অুসবিধার সৃষ্টি করে এমনসব উৎপাত অপসারণের ক্ষেত্রে আইন আমাদের জন্য কি ব্যবস্থা করে রেখেছে।
[post_ads]
উৎপাত সম্পর্কে ম্যাজিষ্ট্রেটকে জানানো
যখন কোন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অথবা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশ রিপোর্ট অথবা অন্য কোন মাধ্যমে সংবাদ পাওয়ার পর প্রয়োজনানুসারে সাক্ষ্য (যদি থাকে) গ্রহণ করে যদি মনে করেন যে, জনসাধারণ আইন সঙ্গতভাবে ব্যবহার করছে বা করতে পারে এরূপ কোন পথ, নদী বা খাল হতে বা কোন প্রকাশ্য স্থান হতে কোন বে-আইনী বাধা বা উৎপাত অপসারণ করা প্রয়োজন; অথবা

কোন ব্যবসায় বা পেশার পরিচালনা অথবা কোন মালপত্র বা পণ্য দ্রব্যের সংরক্ষণ পার্শ্ববতী বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য বা শারীরিক আরাম আয়াসের পক্ষে ক্ষতিকর এবং এর ফলে এরূপ ব্যবসায় বা পেশা নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত হওয়া প্রয়োজন এবং এরূপ মাল পত্র বা পণ্যদ্রব্য অপসারিত হওয়া দরকার বা এর সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রিত হওয়া প্রয়োজন; অথবা

কোন গৃহের নির্মাণ কাজ অথবা ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণ ঘটাবার আশংকাযুক্ত কোন দ্রব্য হস্তান্তর প্রতিহত করা বা বন্ধ করা প্রয়োজন; অথবা

কোন গৃহ, তাবু বা কাঠামো বা কোন বৃক্ষ এমন অবস্থায় আছে যে, তা যেকোন সময় পড়ে যেতে পারে এবং ফলে নিকটবতী স্থানে বসবাসকারী বা ব্যবসায় পরিচালনাকারী বা নিকটবতী স্থান দিয়ে পথ অতিক্রমকারী ব্যক্তিদের ক্ষতির কারণ হতে পারে, এবং এই কারণে উক্ত গৃহ, তাবু বা কাঠামো অপসারণ মেরামত বা অবলম্বন; অথবা উক্ত বৃক্ষের অপসারণ বা অবলম্বন প্রয়োজন; অথবা

জনসাধারণের প্রতি বিপদ প্রতিরোধের জন্য কোন পথ বা প্রকাশ্য স্থানের নিকট যদি কোন পুকুর, কুপ বা খন্দকের চারিদিকে ঘেরা দেয়া প্রয়োজন; অথবা কোন বিপজ্জনক প্রাণী ধ্বংস করা, আটক করা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা প্রয়োজন;

তাহলে উক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট যে ব্যক্তি এরূপ বাধা বা নোংরামীর জন্য দায়ী, অথবা এরূপ ব্যবসায় বা পেশা পরিচালনা করছে অথবা এরূপ মালপত্র বা পণ্য দ্রব্য রেখেছে অথবা এরূপ গৃহ, তাবু, কাঠামো, বস্তু, পুকুর, কুপ বা খন্দকের মালিক, দখলকার বা নিয়ন্ত্রণকারী অথবা এরূপ প্রাণী বা বৃক্ষের মালিক বা দখলকার, তার প্রতি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিম্নলিখিত কার্য করার জন্য শর্ত সাপেক্ষে আদেশ প্রদান করবেনঃ
  • উক্ত বাধা বা উৎপাত অপসারণ করতে; অথবা
  • উক্ত ব্যবসায় বা পেশা হতে বিরত থাকতে; অথবা
  • নির্দেশিত উপায়ে সেটা অপসারণ বা নিয়ন্ত্রণ করতে; অথবা
  • উক্ত মালপত্র বা পণ্যদ্রব্য অপসারণ, অথবা নির্দেশিত উপায়ে উহার সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করতে; অথবা
  • উক্ত গৃহ, তাৰু বা কাঠামো নির্মাণ প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে; অথবা
  • উহা অপসারণ করতে বা মেরামত করতে বা ঠেস দিতে; অথবা
  • উক্ত বৃক্ষ অপসারণ করতে বা ঠেস দিতে; অথবা
  • উক্ত দ্রব্যের হস্তান্তর পরিবর্তন করতে; অথবা
  • উক্ত পুকুর, কুপ বা খন্দকের চারিদিকে বেড়া দিতে; অথবা
  • উক্ত আদেশে বর্ণিত উপায়ে উক্ত বিপজ্জনক প্রাণী ধ্বংস, আটক বা হস্তান্তর করতে;অথবা
  • তিনি যদি এরূপ করতে আপত্তি করেন
তাহলে তাকে আদেশে নির্ধারিত সময়ে ও স্থানে উক্ত ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট অথবা অন্য কোন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট হাজির হতে এবং অতঃপর বর্ণিত উপায়ে আদেশটি বাতিল বা সংশোধন করিয়ে নেওয়ার জন্য আদেশ দিবেন। এই ধারার অধীন কোন ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে প্রদত্ত আদেশ সম্পর্কে কোন দেওয়ানী আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে ‘সর্ব সাধারণের’ স্থান বলতে সরকারের সম্পত্তি, ক্যাম্পিং করিবার স্থান এবং স্বাস্থগত কারণে বা আমোদ-প্রমোদের জন্য রক্ষিত খোলা জায়গাও বুঝায়।[ধারা ১৩৩]
[post_ads_2]
আদেশ যেভাবে জারী করতে হবে
অন্যান্য মামলার সমনজারীর যেক্ষেত্রে এই আইনে যে বিধানবলী রয়েছে সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর সেই উপায়ে আদেশ জারী করতে হবে।কিন্তু এরূপ আদেশ উক্তরূপে জারী করা না গেলে সরকার কর্তৃক প্রণীত নিয়ম দ্বারা নির্দেশিত উপায়ে উহা ঘোষণার দ্বারা প্রজ্ঞাপিত করতে হবে এবং উহার একটি নকল এরূপ স্থান বা স্থানসমূহে লটকায়ে দিতে হবে যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট সংবাদটি পৌছানো সর্বাপেক্ষা সুবিধাজনক হয়।[ধারা- ১৩৪]

আদেশ প্রাপ্তির পর আদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তির করণীয়
যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে এরূপ আদেশ দেয়া হয়েছে, তাকে- ক) আদেশে বর্ণিত উপায়ে ও সময়ের মধ্যে নির্দেশিত কার্য সম্পন্ন করতে হবে; অথবা খ) আদেশানুসারে হাজির হতে হবে এবং উহার বিরুদ্ধে কারণ দর্শাতে হবে।[ধারা-১৩৫]

আদেশ পালন করতে ব্যর্থ হলে কি হবে
যে ব্যক্তিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেই ব্যক্তি যদি নির্দেশিত কাজটি সম্পাদন না করে অথবা আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হন তাহলে তিনি দন্ডবিধির ১৮৮ ধারা মোতাবেক দন্ডিত হবেন এবং তার বিরুদ্ধে প্রচারিত আদেশ চুড়ান্ত হয়ে যাবে। [ধারা-১৩৬]

 আদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তি হাজির হলে করণীয়
যে ব্যক্তিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেই ব্যক্তি যদি আদেশে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে আদালতে হাজির হয়ে তার স্বপক্ষে কারণ দর্শান তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট উক্ত অভিযোগের বিষয়ে স্বাক্ষ্য গ্রহণ করবেন এবং এক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ২০তম অধ্যায়ের নিয়মকানুন অনুসরণ করবেন।স্বাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পর যদি ম্যাজিষ্ট্রেট এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আদেশটি যথাযথ হয়নি, তাহলে তিনি আর কোন পদক্ষেপ নিবেন না। কিন্তু তিনি যদি মনে করেন যে আদেশটি যথাযথ হয়েছে তাহলে তিনি চুড়ান্ত আদেশ দিবেন। 
  • [accordion]
    • লেখক সম্পর্কে জানুন
      • পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে ঢাকা জজ কোর্টে কর্মরত আছেন।
    • ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
      • আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ] 
    • আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
      • সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
    • আমাদের কথা
      • লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের  সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন