Search Suggest

পালিয়ে গিয়ে বিয়ের পর মামলা হলে যা করবেন


ভালোবাসার সম্পর্ক সব সময় যে বিয়ে অবধি গড়ায় তা কিন্তু নয়। অনেক সময়েই বিয়ে পর্যন্ত ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। অনেক সময় একটা প্রেমের সম্পর্ক নষ্ট হয় নিজেদের মধ্যে সমস্যার কারণে । আবার অনেক সময় কারণ হয়ে দাঁড়ায় অভিভাবকের অসম্মতি।

বাবা-মায়ের অসম্মতির কারণে অনেক ভালোবাসার সম্পর্কে ইতি আসে।  অনেকেই তাই বাবা-মায়ের অসম্মতির পরও নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বিয়ে করার জন্য। ঘর পালিয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যান দুজনেই। করে ফেলেন পরিবারকে ছেড়ে যাওয়ার দুঃসাহসিক কাজটি। আইন আদালত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায়  অনেকেই সে সময়টাতে বুঝে উঠতে পারেন না কী করা উচিৎ এবং কি করা উচিত নয়। আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে নিজের ও সেই সাথে পুরো পরিবারকে ফেলেন হুমকির মুখে। আগেই বলে নিচ্ছি আমার উদ্দেশ্য পালিয়ে বিয়ে করতে উথসাহিত করা নয়, বরং পালিয়ে বিয়ে করার পর এর রিস্ক গুলো সম্বন্ধে সচেতন করা।

পালিয়ে বিয়ে করতে গেলে অনেকের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয় যেমন বিয়ের পরে কোনো সমস্যা হবেনা কিনা বা বিয়েটার বৈধতা কেমন হবে। বিয়েটাই বা কোথায় করতে হবে? কোর্টে নাকি কাজী অফিসে? ছেলেরা ভাবে, মেয়ের বাবা যদি নারী নির্যাতনের  মামলা করে দেয় তাহলে কি জেল টেল খাটতে হবে কিনা ইত্যাদি। পালিয়ে বিয়ে করার পর কি একজন নব দম্পতি কি ধরণের আইনি জটিলতায়  পড়তে পারে এবং এর প্রতিকার কি এই সব বিষয় নিয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।

যারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে চান তারা সবাই যে বিষয়টি ভাবেন সেটা হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে তাদেরকে  হয়ত কোর্ট ম্যারেজ করতে হবে। কোর্ট ম্যারেজ টার্মটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু এটা নিয়ে অনেকের এক্টু ভুল ধারনা আছে। অনেকে যারা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বা পালিয়ে বিয়ে করতে চায় তারা কোর্ট মারেজ করতে যায় বা করতে চায়।

অনেকে মনে করেন কোর্ট ম্যারেজ হয়তো কোর্টে গিয়ে বিয়ে করা। অথবা মাজিস্ট্রেট-এর সামনে বিয়ে করা। আসলে তা নয়। কোর্ট ম্যারেজ করতে হলে আপনাকে একজন আইনজীবীর নিকট যেতে হবে। আপনারা যে সেচ্ছায় বিয়ে করেছেন এই মর্মে আইনজীবী একটা হলফনামা তৈরি করবেন যেখানে বর কনে উভয়কেই স্বাক্ষর করতে হয় এবং বলতে হয় তারা নিজেদের ইচ্ছতেই বিয়ে করেছেন। এবং হলফনামাটি নোটারী করতে হয়। এখানে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের ২১ ও মেয়েদের ১৮ বচ্ছর বয়স হতে হবে।

এরপর আইনজীবী তার চেম্বারে একজন রেজিস্টার্ড কাজীকে ডাকবেন। তিনি উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে বিবাহ কাজ সম্পাদন করবেন। এবং কাবিননামায় টিপসই ও স্বাক্ষর নিবেন। আপনাকে অবশ্যই কাবিননামা সংগ্রহ করে নিজ হেফাজতে রাখতে হবে।  এই কাবিন নামাই আপনাদের বিয়ের প্রধান আইনী দলিল। আর যে হলফনামা সম্পাদন করলেন এর ফলে ভবিষ্যতে মামলা টামলায় একটু সুবিধা পাবেন।

তবে জেনে রাখবেন, হলফনামার কোনো দাম নেই যদি আপনার কাবিননামা না থাকে। কাবিননামা থাকলে আপনার বিয়ের পক্ষে আর কোনো ডকুমেন্টই লাগবে না। কাবিননামাই সব।

বিয়ে হয়ে গেলে অনেক সময় পরে দুই পক্ষের পিতা মাতাই মেনে নেন, অনেক সময় মেনে নেন না। অনেক সময় মেয়ের বাবা ক্ষেপে গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে বসেন। মামলাগুলো হয় সাধারনত অপহরনপূর্বক ধর্ষনের। এই মামলাগুলোর জামিন বা রিমান্ড শুনানী এবং বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। মামলার ধারাগুলো জামিন-অযোগ্য এবং আমলযোগ্য, মানে পুলিশ এসব ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের পারমিশন ছাড়াই আসামিকে এরেস্ট করতে পারে।
[post_ads]
মামলা হলে কি করবেন?

মেয়ের বাবা যদি অপহরণের মামলা করেন তাহলে তিনি মিথ্যা মামলা করেছেন এবং মেয়ে তো আমার পক্ষেই আছে এমনটা ভেবে ওই মামলা কে গুরুত্ব না দিয়ে হেলাফেলা করা মোটেও বুদ্ধমানের কাজ নয়। মামলা সত্য হোক বা মিথ্যা সবসময়ই ভালভাবে কন্টেস্ট করতে হবে।

মামলা হলে যে মেয়েকে আপনি পালিয়ে বিয়ে করেছেন তাকে আইনের ভাষায় ভিক্টিম বলা হয়। ওই মামলায় জামিন পাওয়া এবং মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাওয়া অনেকটাই নির্ভর করে ওই মেয়ের দেয়া ২২ ধারার জবানবন্দির উপর। তাই মেয়ে মানে আপনার স্ত্রী যদি আপনার পক্ষে থাকে তাহলে আপনার চিন্তার কারণ নেই।
মামলা হলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আদালতে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে এবং ভালভাবে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এই মামলায় কোন আপোষ হবে না। স্বাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে মামলা শেষ করতে হবে।

  • [accordion]
    • লেখক সম্পর্কে জানুন
      • পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কর্মরত আছেন।
    • ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
      • আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ] 
    • আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
      • সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
    • আমাদের কথা
      • লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের  সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন